বিকালে গরম গরম ১ কাপ চা কিন্তু এক নিমিষেই দূর করে দেয় ,দুপুরে খাওয়ার পর ভাত ঘুমের আলসেমিটা | তারপরে সন্ধ্যে বেলায় শাঁখের আওয়াজ কানে যেতেই ,মনটা কেমন যেন একটু চনমন চনমন করে উঠেই মুখরোচক খাবো ....মুখরোচক খাবো ভাবতে শুরু করে দেয় | আর ভাবনা শেষ হয় অল্প - স্বল্প যে কোনো রকমের সন্ধ্যা - আহারে..........সঙ্গে জমিয়ে চলে গরম গরম আরো ১ কাপ চা |
মধ্যাহ্ন - ভোজের পরে নৈশ - ভোজ | মাঝে অনেকটা গ্যাপ | এতখানি সময় ....কখনোই একদম কিছু না খেয়ে...ছোট থেকে বড়ো... কারোরই থাকা উচিত নয় | শরীরের ক্ষতি হয় | শরীর দুর্বল হয়ে পরে | আর তখনই সহজেই নানা ধরণের ছোট - বড়ো অসুখ শরীরকে আক্রমণ করে | তাছাড়া এই দীর্ঘ সময়টা , কিছু না খেয়ে তো থাকাই যায় না | ক্ষিধে পাবেই পাবে | আর ক্ষিধে পেলে ? ......খেতে তো হবেই |
বিকালবেলায় আমাদের সবারই কিন্তু ,একটু মুখরোচক খেতেই ইচ্ছে করে | শুধু পেট ভরাতে খাওয়া নয় | জিভের স্বাদে চমক আনতে , মনকে আনন্দ দিতেও...... হবে নানা ধরণের চটকদার খাওয়া - দাওয়ার ...... জমিয়ে খাওয়া | কখনো মশলা - মুড়ি , কখনো বা চপ -মুড়ি বা বেগুনি মুড়ি , কখনো বা ঘুগনি - মুড়ি | শুধু মুড়িই বা কেন ? মুখরোচক চিঁড়ে - ভাজা , গরম গরম সিঙ্গারা ,পেঁয়াজ ...লংকায় সেদ্ধ - ছোলা ....আরো কত ....কত কিছু....বলে বোধহয় শেষ করা যাবেনা |
এখন তো আবার ফাস্টফুডের যুগ | ছোট - বড়ো সবাই ছুটে চলেছে .....অপূর্ব ....অপূর্ব স্বাদের নানা ধরণের এই খাবারগুলোর দিকে | রাস্তার দু - পাশে তাকালেই শুধু চোখে পরবে অনেক অনেক রকমের ফাস্টফুডের দোকান | একটাও ফাঁকা নেই | শুধু নানা বয়সের মানুষজনের ভিড় ....আর ভিড় |
আমার কিন্তু সব সময়েই মনে হয় ,ওদের পছন্দমতো কিছু কিছু খাবার যদি মাখে মাঝে আমার রান্নাঘরে ওদের তৈরি করে দিতে পারি , তবে ওরা বাইরের দোকান গুলোর কথা একটু হলেও ভুলে থাকতে পারবে | সব সময়ে বাইরে খাওয়াটাও তো ঠিক নয় , কেমন যেনো অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যাবে , শরীরের হবে বেজায় ক্ষতি | কথাটা ভাবি , কিন্তু .সবসময়ে তো করে উঠতে পারি না ...... তাই ভেবেই চলি আর , ভেবেই চলি ................................
কিন্তু একী ? আজ বাজার থেকে আনা মাছের থলিতে , দু - রকম মাছের সঙ্গে খানিকটা চিকেন ও রয়েছে দেখছি | হঠাৎ ই মাথায় একটা দারুন মজার চিন্তা এসে গেলো | আজ বিকালে আমি সব্বার জন্য ....চিকেন - পকোড়া তৈরি করছিই করছি | সবাই খুশি হবে | শুধু খুশি ই হবে না ......আনন্দে একেবারে আত্মহারা হয়ে যাবে | তবে কিন্তু একটা সত্যি কথা বলেই ফেলি , ......সবাইকে খুশি করতে পারবো বলে ,আমার আনন্দটাই মনে হয় সবচাইতে বেশি ............|
তাড়াতাড়ি বাজার পত্র গুছিয়ে নিয়ে ,চিকেন ম্যারিনেটে মন দিলাম | চিকেন ভালো করে ধুয়ে ,জল ঝরিয়ে নিয়ে একটা পাত্রে রেখে দিলাম | নরম্যাল সাইজ এ কাটা প্রায় ৫০০ - ৬০০ গ্রামের মতো চিকেন | চিকেনের পাত্রের মধ্যে দিলাম ৪-৫ চামচের মতো ভিনিগার | প্রয়োজনমতো অল্প নুন | এবার খোসা ছাড়ানো ইঞ্চি দুয়েক আদা ,একটা মাঝারি সাইজের রসুন , কোয়াগুলো খোসা ছাড়ানো আর ১০-১২টা বোটা ছাড়ানো গোটা কাঁচালঙ্কা .....একটা মিক্সিতে নিয়ে ভালো করে বেটে ফেললাম | বাটা মিশ্রনের অর্ধেকটা চিকেনের পাত্রে দিয়ে দিলাম | বাকি অর্ধেক মিক্সিতে রেখে দিলাম ,পরের কাজের জন্য | চিকেনের পাত্রের সমস্ত উপকরণ হাত দিয়ে ভালো করে মেখে নিয়ে ,পাত্রে একটা ঢাকা দিয়ে ফ্রিজে তুলে রাখলাম ম্যারিনেট হওয়ার জন্য | ........বিকালে ভাজবো ...গরম গরম চিকেন - পকোড়া |
উপকরণ :-
চিকেন - ৫০০ - ৬০০ গ্রামের মতো ( স্বাভাবিক সাইজে টুকরো টুকরো করে কাটা )
ভিনিগার - ৪-৫ চামচ
আয়ারারুট - ১.৫ কাপ
কর্ন ফ্লাওয়ার - ১/২ কাপ
আদা - ২ ইঞ্চি মতো , খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কাটা ,মিক্সিতে নেওয়ার জন্য
রসুন - মাঝারি সাইজের ১টা গোটা , কোয়াগুলো খোসা ছাড়িয়ে রাখা , মিক্সিতে নেওয়ার জন্য
কাঁচালঙ্কা - ১০- ১২টা ,গোটা ,মিক্সিতে নেওয়ার জন্য
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সাদা তেল - প্রয়োজনমতো
পেঁয়াজ - ২টি ,মাঝারি সাইজের ,খোসা ছাড়িয়ে গোল গোল করে কেটে রাখা ,পকোড়ার সঙ্গে খাওয়ার জন্য
টমেটো সস - প্রয়োজনমতো , পকোড়ার সঙ্গে খাওয়ার জন্য
চিলি সস - প্রয়োজনমতো , পকোড়ার সঙ্গে খাওয়ার জন্য
পদ্ধতি :-
ভাত খেয়ে দুপুরে একটু জিরিয়ে নিয়েছি | বিকালে চা করার জন্য রান্নাঘরের দিকে এগোলাম | হঠাৎ ম্যারিনেট চিকেনের কথা মনে পরে গেলো | তাড়াতাড়ি ফ্রিজ থেকে ম্যারিনেট করা চিকেন বার করে রাখলাম , নরম্যাল তাপমাত্রায় আনার জন্য |
বিকালের চা করে ফেললাম | সবাইকে চা - বিস্কুট খাইয়ে , চিকেন পকোড়া তৈরিতে মন লাগিয়ে দিলাম | একটা পাত্রে নিলাম আয়রারুট , কর্ন - ফ্লাওয়ার , মিক্সিতে বেটে রাখা অর্ধেক ....আদা ,রসুন আর কাঁচালংকার মিশ্রণ , প্রয়োজনমতো নুন , প্রয়োজনমতো চিনি আর প্রয়োজনমতো জল | সব কিছু মিশিয়ে মাঝারি ঘন ঘন একটা ব্যাটার তৈরি করে ফেললাম | তৈরি ব্যাটার চেখে দেখে নিলাম | সব তাক তাক হয়েছে মনে হতেই ,মনে হলো চিকেন - পকোড়া গুলো ভেজে ফেলি |
ম্যারিনেট চিকেন ও স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এসে গেছে | গ্যাসে কড়াই চাপলাম | দিলাম প্রয়োজনমতো সাদা তেল | বেশি আঁচে তেল গরম হয়ে উঠলেই ,আঁচ কমিয়ে দিলাম | এক একটি ম্যারিনেট চিকেন, তৈরি করে রাখা ব্যাটারে ডুবিয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে চিকেনের পকোড়াগুলো মুচমুচে করে ভেজে নিয়ে ,কড়াই থেকে তুলে একটা পাত্রে রাখলাম | এইভাবে সমস্ত ম্যারিনেট চিকেন দিয়ে ,মুখরোচক চিকেন - পকোড়া ভেজে ফেললাম |
পকোড়া ভাজার গন্ধে চারিদিক ম ম করছে | সুন্দর গন্ধে জিভে জল !! আর ....আর দেরি করতে পারছিলাম না ! ..........এবার তবে কি ? শুধু জমিয়ে খাওয়া - দাওয়া | পেঁয়াজ কুচি ,টমেটো - সস ,চিলি - সস দিয়ে বাড়ির সব্বাই মিলে অনেক আনন্দ করে ...মজা করে ...চিকেন - পকোড়া খাওয়া শুরু করে দিলাম | খেয়েই চলেছি .......খেয়েই চলেছি ........, ওঃ ! কি খেতে হয়েছে !! অসাধারণ ! অ..... সাধারণ !বড়োই টেস্টি টেস্টি ! .......বাহ্ ! খাওয়ার আনন্দে মন ভরে গেলো ......| খাওয়া শেষে সবাই মিলে খেলাম আর এক কাপ করে গরম গরম চা ...............| আমার ড্রইং রুমের উপর দিয়ে যেনো বয়ে চলেছে খুশির এক সুন্দর হাওয়া .........হয়ে উঠেছে এক দারুন মনোরম খুশির পরিবেশ .......
খুশি খুশি থাকুন | ভালো থাকুন | সুস্থ থাকুন | অনেক অনেক আনন্দে থাকুন |
Comments