আজ দুপুরের মেনুতে ভেবেছি ,দুধ - চালকুমড়া রাঁধবো। তাই বাজার থেকে আনা কচি চালকুমড়োটা খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে ,বড়ো বড়ো টুকরো করে কেটে জলে ধুয়ে নিয়ে ,কুড়ানিতে কুড়িয়ে নিতে লাগলাম। চালকুমড়া কুড়াতে কুড়াতে হঠাত মনে হলো , কুড়ানো চালকুমড়া বেশ অনেকটা হয়েছে। এর থেকে কিছুটা নিয়ে যদি সবার জন্য দুটো করে করে টেস্টি টেস্টি চালকুমড়োর বড়া ভেজে দিই ,তবে মনে হয় প্রথম পাতের গরম গরম ভাত দুধ -চালকুমড়া আর ভাজা
চালকুমড়োর বড়া দিয়ে দারুন ,দারুন জমে উঠবেই উঠবে। নিজের চিন্তা ভাবনায় নিজেরই খুব আনন্দ হতে লাগলো।
আমরা বাঙালিরা উৎসবের পূজারী। উৎসব মানেই আনন্দ । উৎসব মানেই সামাজিক মেলবন্ধন। তাই তো আমাদের বারো মাসে তেরো পার্বণ আর নানা ধরণের আনন্দ অনুষ্ঠান। তবে আমাদের সবচেয়ে আনন্দের উৎসব '' দুর্গোউৎসব ''। দেখার উৎসব ,শোনার উৎসব ,উপার্জনের নতুন পথের উৎসব , সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠানের উৎসব ,নতুন নতুন পরিধানের উৎসব , মজাদার খাওয়া দাওয়ায় মেতে থাকার উৎসব।আরো কত কত ....... ''মা উমা ''...র আগমনে চারিদিক আনন্দ বন্যায় প্লাবিত হওয়ার উৎসব ।
সেই আনন্দের প্লাবন অহরহ বয়ে চলেছে আমাদের এই ছোট্ট সংসারে। আর এই প্লাবনের ছোঁয়া বোধহয় সবচাইতে বেশি নানা মজাদার খাওয়া দাওয়াতে। নিত্যদিন মধুর মধুর পদ , আর নিত্যদিন মধুর মধুর আনন্দ। আমিও কিন্তু অল্প স্বল্প সেই চেষ্টাতেই রয়েছি , উৎসবের ছোঁয়া যেন উৎসবের মরশুমে .......আমাদের ছোট্ট ঘরটাতে ভরে থাকে।
বড়া ভাজায় দেব বলে ৩-৪ চামচ গোবিন্দভোগ চাল জলে ভিজিয়ে রাখলাম। সকালের জলখাবার খেয়ে দেয়ে দুপুরের রান্নায় মন দিলাম। গরম গরম বড়া ,দুপুরের খাওয়ার আগে আগে ভাজবো ,এখন রান্না করতে করতে বড়া ভাজার প্রস্তুতি কিছুটা করেই রাখি , খুব সুবিধা হবে। গরম গরম বড়া ভাজবো ,আর পাতে পাতে এগিয়ে দেব ।
উপকরণ :-
চালকুমড়া - কচি চালকুমড়োর খানিকটা ,কুড়িয়ে নেওয়া
কাঁচালঙ্কা - কয়েকটা বেটে নেওয়া ,আর কয়েকটা কুচিয়ে নেওয়া ( ঝাল নিজের পছন্দ মতো )
আদা - ১/২ ইঞ্চি মতো
রসুন - কয়েকটা কোয়া ,ছাড়িয়ে নেওয়া
ময়দা - ১ কাপ মতো
কর্ন ফ্লাওয়ার - ১/৪ কাপ
গোবিন্দভোগ চাল - ৩-৪ চামচ
গোটা পোস্ত - ৪-৫ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সাদা তেল - প্রয়োজনমতো ( বড়া ভাজার জন্য )
পদ্ধতি :-
অন্য রান্নার ফাঁকে ফাঁকে বড়া ভাজার প্রস্তুতি করে নিতে লাগলাম। প্রথমেই মিক্সিতে ভেজা গোবিন্দভোগ চাল ,কাঁচালঙ্কা ,আদা ,রসুন কোয়া নিয়ে ভালো করে বেটে নিলাম। এবার একটা পাত্রে নিলাম ময়দা ,কর্ন - ফ্লাওয়ার , মিক্সিতে বেটে রাখা মিশ্রণ , নুন ,চিনি। ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে দিলাম ,প্রয়োজনমতো জল। জলে সমস্ত কিছু ভালো মতো মিশিয়ে নিয়ে ফেটিয়ে নিলাম । দিলাম কুড়ানো চালকুমড়ো। আবারো সব ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে ,মাখার স্বাদ দেখে নিলাম। মাখা মিশ্রণটি ঢাকা দিয়ে রাখলাম।
সব রান্নার শেষে বড়া ভাজায় মন দিলাম। মেখে রাখা বড়া ভাজার মিশ্রনে দিলাম খানিকটা কুচানো কাঁচালঙ্কা আর ৫-৬ চামচ গোটা পোস্ত। হাত দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিলাম। গ্যাসে কড়াই চাপলাম। দিলাম বড়া ভাজার প্রয়োজনমতো তেল। তেল গরম হতেই আঁচ কমিয়ে ,মাখা মিশ্রণ থেকে বড়ার আকারে গড়ে নিয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ,বড়া গুলোর এপিঠ ওপিঠ করে নিয়ে ,একেবারে মুচমুচে করে বড়া ভেজে নিয়ে ,তেল থেকে তুলে নিলাম। সমস্ত বড়া ভেজে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করলাম।
আজ খাবার টেবিলের খাওয়া দাওয়া বেশ রাজকীয় ভাবেই শুরু হলো। রান্নার মজাদার স্বাদে সবার মন যে ভরে উঠেছে ,তা তাদের প্রশংসার ঝলকেই বোঝা যাচ্ছিলো। .......আহা - হা ! কি সুন্দর রান্নার স্বাদ। সত্যিই বড়োই মুখরোচক ! প্রতিটি রান্নাই অপূর্ব ! কিন্তু আজকের খাবার টেবিল অসাধারণ হয়ে উঠেছে গরম গরম বড়া ভাজার অসাধারণ স্বাদে।........ এই আনন্দটুকু দেখতেই তো এতো চেষ্টা। সবার আনন্দ ,খুশিই তো আমারও আনন্দ আর খুশি।
উৎসবের আনন্দে সবাই আনন্দিত হোন। ভালো খান ,ভালো থাকুন ,আর অবশ্যই সুস্থ তো থাকবেনই। আপনাদের -আমাদের - সবার আনন্দের উৎসব মুখরিত হবেই হবে।
Comentários