আজ আমার রান্নাঘরে মাছের বাজার থেকে পৌঁছে গেছে খানিকটা চ্যালা মাছ | খুবই মিষ্টি স্বাদের মাছ | দেখেই আমার খুশি যেনো আর ধরে না ! ভালো লাগছে | এই ছোট ছোট টাটকা মাছগুলো স্বাদে যেমন অসাধারণ .......গুনেও ঠিক তেমনি ........| মাছ প্রিয় বাঙালির ভাতের পাতে , বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই বড়ো - ছোট নানা ....নানা ধরণের মাছের নানা ধরণের পদের আনাগোনা | তবে গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরেই টাটকা টাটকা ছোট মাছগুলোর চাহিদা যেনো একটু বেশিই | পুকুরে বা নদীতে জাল ফেলে .....কখনো কখনো বা গামছা দিয়েই ছোট ছোট মাছ ধরে ,মহানন্দে নানা পদ রান্না করে ,গরম গরম ভাতের সঙ্গে জমিয়ে জমিয়ে চলে খাওয়া দাওয়া |
তবে সত্যি বলতে কি ,এই ছোট ছোট মাছগুলো কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য ভীষণই উপকারী | মুখের স্বাদে তো চমক আনেই , মন ও তৃপ্তিতে ভরিয়ে তোলে ...........কিন্তু সবচাইতে বড়ো কথা , আমাদের শরীরের হাড়ের কাঠামো দারুন দারুন ভাবে মজবুত করে দেয় | ছোটদের হাড় বেড়ে ওঠায় ,হাড় কে মজবুত করে তুলতে এদের কার্যকারিতা অসীম |
আবার চোখের নজর ভালো রাখতে এই মাছগুলো তুলনাহীন | আর তাইতো , ছোট থেকে বড়ো সবারই , শরীর - মন ভালো রাখতে মাঝে মাঝে এই উপকারী উপকরণগুলো আমাদের রান্নাঘরে আনতেই হবে |
এই কিছুদিন আগেও মাছের বাজারে ছোট ছোট মাছগুলো বেশ কম দামেই ,গ্রাম - গঞ্জে থেকে আসা মাছ ওয়ালাদের কাছে পাওয়া যেতো , আর সাধারণ মানুষজন খুব আনন্দের সঙ্গেই গরম গরম মাছ ভাতে পেট ভরাতো - মন ভরাতো | কিন্তু এখন তো বাজার দর একেবারে উল্টো | এই
ছোট ছোট মাছগুলো দর -দামে , বড়ো বড়ো রুই - কাতলার থেকেও অনেক অনেক বেশি | আর সবচাইতে আশ্চর্যের কথা , এই ছোট মাছগুলো বাজারে আসা মাত্রই নিমিষে বিক্রি হয়ে যায় , কখনো কখনো তো ক্রেতাদের মধ্যে কাড়াকাড়িও পরে যায় |
তারমানে ,একটা কথাতো ঠিক ,এই ছোট ছোট মাছগুলোর উপকারী কার্যক্ষমতার কথা ধীরে ধীরে কথায় কথায় সবার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে | আর তাইতো গ্রামে -গঞ্জের মানুষজন তো এই মাছগুলোর ভক্ত ছিলোই , শহরের মানুষজন ও ছোট ছোট মাছ বাজারে দেখলেই ,তড়িঘড়ি তা মাছের থলিতে ভরে ফেলছে | মোটকথা উপকারীতার তাৎপর্য বুঝে চাহিদাও অনেক অনেক বেড়ে গেছে | মনে হয় আরো আরো বেড়ে যাবেও ..................................
উপকরণ :
চ্যালা মাছ - ৩৫০ গ্রাম , কেটেকুটে পরিষ্কার করে ধুয়ে ,নুন হলুদ মাখানো
ধনেপাতা - ১ কাপ মতো ,কুচানো
পেঁয়াজ - মাঝারি সাইজের , ৬-৭টা , খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে মিহি করে কুচিয়ে রাখা
কাঁচালঙ্কা - ৮-১০ টা , লম্বালম্বি চেরা , ঝাল কিন্তু নিজের নিজের পছন্দমতো
শুকনোলঙ্কা - ২টো ফাটানো , একটু সুন্দর গন্ধের জন্য
পাঁচফোড়ন - ১/২ চামচ
কালোজিরে - ১/২ চামচ
গুঁড়ো হলুদ - ২ চামচ মতো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
রান্না শুরুর প্রথমেই গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল দিলাম | তেল ভালোমতো গরম হয়ে এলে আঁচ কমিয়ে , নুন হলুদ মাখানো কয়েকটা চ্যালা মাছ কড়াইয়ের গরম তেলে ছেড়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে মুচমুচে করে মাছগুলো ভেজে তুলে নিলাম | এইভাবেই সমস্ত চ্যালামাছ ভেজে ফেললাম |
মাছ ভাজা হয়ে যেতেই , কড়াইতে থাকা মাছ ভাজার তেলের মধ্যেই প্রয়োজনমতো আর একটু তেল দিয়ে দিলাম | তেল গরম হয়ে উঠলে আঁচ কমিয়ে গোটা ফাটানো শুকনোলঙ্কা ২টো কড়াইয়ের মধ্যে ছেড়ে দিলাম | লঙ্কা ২টো একটু ভাজা ভাজা হয়ে এলে ,তেল থেকে তুলে নিলাম | শুকনোলঙ্কা ভাজার সুন্দর গন্ধ তেলে ছড়িয়ে পড়লো | এতে রান্নায় এক মজাদার স্বাদ এসে যায় |
এবার কম আঁচেই তেলের মধ্যে দিলাম পাঁচফোড়ন ,কালোজিরে আর ২-১টা চেরা কাঁচালঙ্কা | দিলাম কুচানো পেঁয়াজগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে পেঁয়াজগুলো ভেজে মজিয়ে নিলাম | দিলাম ১/২ চামচ হলুদগুঁড়ো ,প্রয়োজনমতো নুন আর কয়েকদানা চিনি | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ,আবার কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ নাড়াচাড়া করতে করতে দিয়ে দিলাম জলে ধুয়ে জল ঝরানো কুচানো ধনেপাতাগুলো |
আবার সমস্ত নেড়ে নেড়ে মিশিয়ে নিতে লাগলাম | কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ ভালোমতো মজে গিয়েছে মনে হতেই ,আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে ছেড়ে দিলাম ভেজে রাখা চ্যালা মাছগুলো | দিলাম চিরে রাখা বাকি কাঁচালংকাগুলো |
আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভাজা চ্যালামাছ , পেঁয়াজ ,ধনেপাতা সব মিশিয়ে নিতে লাগলাম | আহা...হা ...হা ...কি অপূর্ব রান্নার গন্ধ !!! রান্নাঘরটা এক সুন্দর রসালো লোভনীয় গন্ধে ভরে উঠেছে |
রান্না হয়ে গেছে মনে হতেই , রান্নার স্বাদ চেখে নিলাম | সত্যিই খুব সুন্দর হয়েছে | দেখি !! খাবার টেবিলে বাড়ির সবাই মজা পায় কিনা !! ...........অবশেষে এলো আমাদের মধ্যাহ্ন ভোজের সময় | গরম ভাতের সঙ্গে চ্যালা মাছ মেখে মুখে দিতেই ..........আহা ...আহা ...মুখ অপূর্ব স্বাদে ভরে গেলো .....মনও ভরে উঠলো অনেক অনেক খুশিতে আর চমক স্বাদের আনন্দে |
আপনারাও সবাই অনেক অনেক খুশিতে থাকুন | ভালো ভালো খেয়ে - দেয়ে থাকুন আনন্দে | আর থাকুন অবশ্যই অনেক অ............... নেক সুস্থ |
Comments