কি রাঁধবো ? কি রাঁধবো ? আজ কি কি রাঁধবো দুপুরের মেনুতে ? সকালের জল খাবার তৈরি করতে করতে ভাবছি .......হঠাৎ খেয়াল করলাম বাজার এসেই গেছে। বাঃ ! দেখিতো কি কি এলো ? ওমাঃ ! পালং শাক ! বলতে গেলে বেশ অনেকদিন বাদেই। এখন তো বাজারে পালং শাক কমই দেখতে পাই। শীত আসুক না ! বাজার ভরে থাকবে সবুজ সবুজ পালং শাকে। কি ভালো যে দেখতে লাগে .....। যাহোক ,দেখি আর কি কি বাজারে এলো ? বেগুন ,আলু ,পনির ,কাতলা মাছ ,টমেটো ,কাঁচালঙ্কা ......।
বাঃ ! কত কিছু। কত্তো কিছু !
খুব আনন্দ হচ্ছিলো। ঠিক করেই ফেললাম আজ নিরামিষ মেনুতে রাঁধবো খুব হালকা করে ,বাঙালিদের চিরদিনের প্রিয় মেনু ,বড়ি ,বেগুন ,আলু দিয়ে পালং শাকের রসা। গরম ভাতে প্রথম পাতে এক দারুন মেনু। খুবই হালকা মেনু ,অথচ বড়োই টেস্টি টেস্টি আর ভীষণ ভীষণ
উপকারী। পালং শাকের খাদ্যগুন যে অনেক অনেক বেশি। সবুজে সমৃদ্ধ ,আইরন ,ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ এই সবজি আমাদের সবার জন্য যে কত উপকারী ,তা বলে বোধহয় শেষ করাই যাবে না।
এদিকে জলখাবারের জন্য সবাই টেবিলে বসে গেছে। আর দেরি করা তো যাবে না। সবাই মিলে জলখাবার খেয়ে দেয়ে নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো। আমিও চললাম রান্নাঘরে ,আমার রান্নার কাজ শেষ করতে। আজকের প্রথম রান্না আলু, বেগুন বড়ি দিয়ে কম মশলায় হালকা অথচ টেস্টি টেস্টি করে পালং শাকের রসা ...........
উপকরণ :-
পালং শাক - ৪০০ গ্রাম
বেগুন - ২টি ( মাঝারি সাইজের ,লম্বালম্বি ৬ টুকরো করে কাটা )
আলু - ৩টি ( মাঝারি সাইজের ,লম্বালম্বি - খোসাসুদ্ধ ৬ টুকরো করে কাটা )
বড়ি - ১৭-১৮ টা
কাঁচালঙ্কা - ৫-৬ টি ( লম্বা লম্বি দু - ভাগে চেরা )
গোটা শুকনোলঙ্কা - ৩টি ,একটু করে ফাটানো
পাঁচফোড়ন - ১ চামচ
হলুদগুঁড়ো - ১-১.৫ চামচ
জিরেগুঁড়ো - ২-৩ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
রান্নার শুরুর প্রথমেই পালং শাকগুলো খুব ভালো করে বেছে নিয়ে কেটে কুটে জলে ভিজিয়ে দিলাম। যে কোনো শাকেই মাটি বালি একটু বেশিই থাকে। তাই শাক রান্না করার আগে খুব ভালো করে জলে ভিজিয়ে রেখে বার বার ধুয়ে নিতে হয়। আমি ও পালং শাক বার বার জলে ধুয়ে নিয়ে জল ঝরিয়ে নিলাম।
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে তেল দিলাম। তেল গরম হলে বড়িগুলো একটু কড়া করে ভেজে নিলাম। এরপর কড়াইতে দিলাম ফাটানো শুকনোলঙ্কা ,পাঁচ ফোড়ন আর জলে ভালো করে ধুয়ে রাখা খোসা শুদ্ধ আলুগুলো। বেশি আঁচে আলুগুলো ভাজতে লাগলাম। আলুগুলো একটু রাঙা রাঙা হতেই দিলাম হলুদগুঁড়ো ,নুন আর চিনি। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে দিলাম ,কয়েকটা অর্ধেক করে চেরা কাঁচালঙ্কা আর ধুয়ে রাখা বেগুনের টুকরোগুলো আর টমেটোর টুকরোগুলো । আবারো আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নাড়তে লাগলাম।
আলু - বেগুন একটু নরম হতেই দিলাম জিরেগুঁড়ো। আঁচ বাড়িয়ে নেড়ে নিয়ে দিলাম পালং শাকের টুকরোগুলো আর ২-৩ টা অর্ধেক করে চেরা কাঁচালঙ্কা। আঁচ বাড়িয়ে নাড়াচাড়া করে নিয়ে আঁচ
কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিলাম। খানিক্ষন বাদে ঢাকা খুলে দেখি পালং শাক থেকে কিছুটা জল বেরিয়ে রান্নায় মিশে গেছে। এবার ভেজে রাখা বাড়ির টুকরোগুলো রান্নায় দিয়ে আঁচ বাড়িয়ে রান্না নেড়েচেড়ে নিয়ে ,আবার ঢাকা দিয়ে ,পালং শাকের থেকে বের হওয়া জলেই রান্না কিছুক্ষন হতে দিলাম।
সমস্ত উপকরণের এক সুন্দর গন্ধে রান্নাঘর ভরে উঠলো। ঢাকা খুলে দেখলাম রান্না প্রায় হয়েই গেছে। রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম। আঁচ বাড়িয়ে রান্না রসা রসা করে নিয়ে ,গ্যাস বন্ধ করে দিলাম। রান্না একটা পাত্রে ঢেলে নিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখলাম।
আজকের রান্না এই নিরামিষ পদটি আমাদের সবারই ভীষণ ভীষণ প্রিয়। খুবই ভালো লাগে। অনেকদিন বাদে বড়ি পালংয়ের এই তরকারি দিয়ে খাওয়া শুরু করতেই মন যেন অনেক অনেক আনন্দ আর সন্তুষ্টিতে ভরে উঠলো। আমাদের যে কি ভালো লাগছিলো তা বোধহয় আমরাই জানি। খাওয়া যেমন শুরু হয়েছিল অনেক আনন্দে , তার রেশে শেষ হলো খুবই আনন্দে।
আপনারা আনন্দে থাকুন। খুব ভালো থাকুন আর অনেক অনেক সুস্থ থাকুন।
コメント