top of page

বেগুন - পোড়া


দিন - কয়েক হলো বে.............শ ঠান্ডা পড়েছে | আর খুব ভালো ও লাগছে | গরমের দাপটের দেশে অল্পক্ষনের অতিথি শীত কে বোধহয় আমরা অনেকেই একটু বেশিই পছন্দ করি | অসহ্য গরমে মনে হয় ,আহা - হা - হা কখন যে শীতকাল আসবে !! .........শীত শীত ভাবে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়ানো শীতকাল কিন্তু বড়োই মজাদার ..... | শীতে মনে হয় সবচাইতে সুখের ব্যাপার .....বিছানায় লেপের নিচে নিজের পা- জোড়াকে ঢেকে রাখা | লেপের তলায় একবার পা রাখলে ....লেপের বাইরে পা রাখতে আর ইচ্ছাই করে না |



আজ সকালে আমার ও কিন্তু সেই একই অবস্থা | অনেক কষ্টে লেপের তলা থেকে পা বাইরে রাখলাম | ৬টা বাজে ......কিন্তু কাঁচের জানলার বাইরেটা বেশ কুয়াশায় ভরা ভরা | বাড়ির অনেকেই ধীরে ধীরে বিছানা ছাড়ছে | সকালে আরামের চা ...সবার কাছে পৌঁছে দিয়ে......নিজে টেবিলে বসে সবে আয়েশ করে দুটো চুমুক দিয়েছি.......হঠাৎ কানে এলো ........ও -দাদা ! .....ও - দাদা .....ও - দিদি ...একবার এদিকে দেখুন ....দু - টো নিয়ে যান ,পুড়িয়ে খাবেন

,একেবারে মাখন .....মাখন | এই শীতের সকাল জমে যাবেই যাবে .....| ও .....দাদা ,ও ........দিদি .......


চায়ের কাপ হাতে ...টেবিল থেকে উঠে জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখি .....রাস্তার ওপারে একটা ঠেলায় বেশ কয়েকটা খুব টাটকা ,বোঁটাতে কাঁটায় ভরা সাদা বেগুন | এদিকে ছেলেটাতো সমানে বলেই চলেছে ,শীতে এই বেগুন - পোড়া কিন্তু দারুন ! দারুন ! ....আসুন ,নিয়ে যান ....নিয়ে যান .....একবার নিয়ে দেখুন ......


ছেলেটার বলার ধরণে ,ওর গলার আওয়াজে এমন কিছু ছিল .......তাড়াতাড়ি চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে ,পয়সার ব্যাগটা নিয়ে ,মাথা ভালো করে মুড়ে নিয়ে ,বাড়ির বাইরের দরজাটা ভিজিয়ে রেখে গুটি গুটি পায়ে রাস্তার ওপারে ছেলেটার দিকে এগিয়ে চললাম | বাড়ির কেউ তো আমাকে খেয়ালই করেনি |ভেবে নিলাম সকালের জলখাবারে বেগুনপোড়া আর গরম গরম রুটি খাইয়ে সবাইকে অবাক করে দেবো ! দু - টো টাটকা কাঁটাওয়ালা সাদা বেগুন কিনে নিয়ে আবার গুটি গুটি পায়ে ভেজানো দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে , একেবারে রান্নাঘরে চলে এলাম |খুব মজা হচ্ছে ! মুখরোচক - টেস্টি - টেস্টি বেগুনপোড়া - মাখা আর গরম গরম রুটি , জলখাবার -- মনে হয় দারুন - দারুন জমে যাবে |



শীতকালে বেগুনপোড়া তো সবার প্রিয় | শীতের নানা পছন্দের কথা ভাবতে গেলে ,অবশ্যই বেগুনপোড়ার কথা তো মনে আসবেই | ভাবলেই যেন জিভে জল , স্বাদে খুশির আমেজ | বোঁটায় কাঁটাওয়ালা সাদা বেগুনপোড়া ....রুটি বা মুড়ির সঙ্গে খেতে কিন্তু বড়োই সুন্দর |


যে কোনো গ্রামের একটু ভেতর দিকে গেলেই দেখা যাবে ,অর্গানিক সবজি গ্রামের মানুষজন কত যত্ন করে ফলায় | খড়ের বা টালির ছাদের মাটির ঘর গুলোর আশেপাশের জমি কি সুন্দর ভাবে চাষ করা আর সেগুলো ভরে থাকা টাটকা টাটকা আকর্ষণীয় বেগুন ,মুলো,সিম,

ফুলকপি ,বাঁধাকপি ,লাউ ,কুমড়ো ,কাঁচালঙ্কা প্রভৃতি সবজির ফলন দিয়ে | তাদের মনে বেগুনপোড়া খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে ?! সঙ্গে সঙ্গেই একটা বা দুটো বেগুন গাছ থেকে তুলে ,সুন্দর করে পুড়িয়ে - মেখে নিয়ে রুটি বা মুড়ির সঙ্গে জমিয়ে জমিয়ে খাওয়া .......আহা - হা ...টাটকা টাটকা সবজি স্বাদগুণে যে বড়োই অসাধারণ ! অসাধারণ !!


এদিকে ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরে আমি জলখাবারে ....সবার জন্যে রুটি গুলো তৈরি করেই ফেললাম | ভাবনা তো চলছেই ....তবে হাত কিন্তু থেমে নেই ......এবার পোড়াবো বেগুন ...................


উপকরণ :-


  • বেগুন - ২টি ( বোঁটায় কাঁটা ভর্তি আর সাদা রঙের )

  • টমেটো - ১টি , বড়ো সাইজের

  • পেঁয়াজ -২টি , মাঝারি সাইজের ( কুচানো )

  • কচি কচি ধনেপাতা - কুচানো ,১ কাপ মতো

  • কাঁচালঙ্কা - ২-৩টি (অর্ধেক করে চিরে রাখা )

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - কয়েকদানা ,বেগুনপোড়ায় স্বাদের চটক আনতে |

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো


পদ্ধতি :-


প্রথমেই কাঁটাওয়ালা সাদা বেগুন দুটো ভালো করে ধুয়ে মুছে --হালকা হাতে বেগুনগুলোর গায়ে একটু সর্ষের তেল মাখিয়ে নিলাম | একটা বড়োই প্রয়োজনীয় কথা .....বেগুনপোড়া জমে কিন্তু শুধুই....... সরিষার তৈল তেই......| এবার গ্যাস জ্বালিয়ে একে একে ২টো বেগুন আর টমেটো টা ভালো করে পুড়িয়ে নিয়ে একটা ছড়ানো পাত্রে রেখে দিলাম |


অন্য একটা পাত্রে খানিকটা জল নিয়ে ,জলের পাত্রে বার বার হাত ডুবিয়ে পোড়া বেগুনের খোসা ভালো করে ছাড়িয়ে নিলাম | পোড়া টমেটোর খোসা ও ছাড়িয়ে রাখলাম | যে পাত্রটিতে খোসা ছাড়ানো পোড়া বেগুন আর পোড়া টমেটো

রেখেছি ,সেই পাত্রের মধ্যে দিলাম কুচানো পেঁয়াজ ,কুচানো ধনেপাতা ,চেরা কাঁচালংকাগুলো ,প্রয়োজনমতো নুন ,প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল আর বেগুনপোড়ার স্বাদ অসাধারণ করে তুলতে কয়েকটি চিনির দানা|


পাত্রের মধ্যে নেওয়া সমস্ত উপকরণ ,হাত দিয়ে ভা ......লো করে মেখে নিলাম |স্বাদ দেখে নিলাম |.. ওঃ ! দারুন লাগছে ! মন যেন রুটি - বেগুনপোড়া মুখে দিয়েই সবার একটা কথাই বার বার শোনা যাচ্ছে আনন্দে ভরে ভরে যাচ্ছে | আসলে খেয়ে সবাই তৃপ্তি পেলে, আমার যে বড়োই ভালো লাগে | যাই হোক ,জলখাবারে সব্বাইকে দিলাম রুটি আর সঙ্গে ...মুখরোচক বেগুনপোড়া | সবাই তো দেখে অবাক | কেউ

একজন বলে উঠলো '' আজ সকালের মেনুতে বেগুনপোড়া !...জানিনাতো ? তবে বেগুনপোড়া - বেগুনপোড়া গন্ধ পাচ্ছিলাম , ভাবলাম আশে- পাশের কোনো বাড়িতে হচ্ছে বোধহয় ''!


''আমি আজ সকালে রাস্তার ওপারে একটা ঠেলা থেকে সাদা বেগুন দুটো কিনে এনেছি '' |'' তুমি ''?! ....সব্বাই অবাক ! ''হুঁ ! আমি .......এখন সবাই খাওয়া শুরু করো ,শুরু করো ....অনেক কাজ বাকি ....|রুটি - বেগুনপোড়া মুখে দিয়েই সবার একটা কথাই বার বার শোনা যাচ্ছে ''ওঃ ! দারুন হয়েছে ! দারুন খেতে লাগছে .....দারুন ''! আমি ও বেগুনপোড়া মাখা দিয়ে রুটি খেতে শুরু করলাম | হঠাৎ কানে যেনো সে .....ই সুরটা বেজে উঠলো .......ও ..দাদা ,ও ..দাদা .....ও... দিদি ...দুটো নিয়ে যান না ....পুড়িয়ে খাবেন ....মাখন ...একেবারে মাখন ............ সত্যিই কথাটা যেনো বড়োই সত্যি !!!


সবাই ভালো থাকুন ,জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করুন ,আনন্দে থাকুন আর অবশ্যই সুস্থ থাকুন |





17 views0 comments

Comments


bottom of page