বে - গুন্..........নেই গুন্ ? না ! না ! না ! অনেকেরই এই রকম ধারণা থাকলেও কথাটা একদমই ঠিক নয়। ঠিক তার উল্টো। আমাদের সবার পরিচিত ,মাঝে মাঝেই রান্নাঘরে প্রবেশ করা এই সবজি কিন্তু হরেক রকম গুনে গুণান্বিত। প্রকৃতির সৃষ্টি প্রতিটি সম্পদই কোনো না কোনো গুনে ভরা। প্রকৃতি নিরপেক্ষ। তার কাছে তার সব সৃষ্টিই সমান। প্রত্যেকেরই গুন্ আছে । শুধু প্রকৃতির সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে তা খুঁজে নিতে হবে। কারণ প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ জীবের জন্যই যে প্রকৃতির এতো সম্ভার।
যাহোক ,বলছিলাম বেগুনের কথা। বেগুন নানা গুনের ভান্ডার। ঔষধীগুনে ভরা। বেগুন সুগার নিয়ন্ত্রণে ,হার্ট ভালো রাখতে ,টেনশন কমাতে ,চুল - ত্বক ভালো রাখতে ভীষণ ভাবে কর্যকারী। বেগুন ফাইবারে আর আন্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর। তাই হজম শক্তি বাড়াতে ,পেট ভালো রাখতে ,শরীর ভালো রাখতে খুবই সাহায্য করে। আমরা প্রত্যেকেই মাঝে মাঝে এই সবজিকে খাদ্য তালিকায় রাখি -আর রাখতেও হবে।
বেগুন ভাজা ,বেগুন ভাপা ,বেগুন পোড়া,বেগুন ভাতে ..........খাবার গুলোর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। বেগুনি ........বেগুনি সবার কত কত প্রিয় ,এতো আমরা সব্বাই জানি। বিশেষ করে গ্রামে গঞ্জে মানুষজনের দু - বেলার প্রিয় খাবার বেগুনি মুড়ি ,চপ মুড়ি .......। তার মানে বেগুন ...এই সবজিটি সবারই খুব পরিচিত। আজ আমার রান্নাঘরে বাজারের থলিতে দেখি কচি কচি দু - তিনটি বেগুন। বেগুন তরকারির ঝুড়িতে রাখতে রাখতেই কথাগুলো মনে হচ্ছিলো। তাই সবাইকে একটু জানালাম।
ক-দিন ধরে ভালো রকম বৃষ্টি। মাঝে মাঝে খুবই আরামদায়ক আবহাওয়া। ভাবলাম আজ দুপুরের মেনুতে একটু মুখরোচক করে বেগুন রাঁধবো। বৃষ্টি ভেজা দিনে দুপুরের খাবার টেবিল বেশ জমে উঠবে। আজকের মেনু সর্ষে -পোস্তোয় বেগুন - মুখরোচক। কি রাঁধছি,কাউকে জানাবো না। একেবারে টেবিলে চমকে দেবো । রান্নাটা খুবই সহজ। কিন্তু ভীষণ টেস্টি টেস্টি। মুখরোচক এক আচারের মতো। গরম ভাতে অসাধারণ। জিভে জল আনা স্বাদ।
উপকরণ :-
কচি বেগুন - ৩টি ( লম্বালম্বি ৪ টুকরো করে কাটা )
সর্ষে - ৩ চামচ
পোস্ত - ৩ চামচ
গোটা কাঁচালঙ্কা - ৭-৮টি
হলুদ গুঁড়ো - ১-১.৫ চামচ
লাল লঙ্কাগুঁড়ো ১-২ চামচ
পাঁচফোড়ন - ১-১.৫ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সাদাতেল - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
যখনই ভাবলাম বেগুন - মুখরোচক রাঁধবো ,তখনি ৩ চামচ সর্ষে আর ৩ চামচ পোস্ত জলে ভিজিয়ে রেখেছিলাম। রান্না শুরুর প্রথমেই জল ঝরিয়ে পোস্ত ,সর্ষে আর ২ -৩ টি কাঁচালঙ্কা মিক্সিতে নিয়ে মিহি করে বেটে নিলাম।
কাটা বেগুন জলে ধুয়ে নিয়ে এক চিমটে হলুদ ,অল্প নুন আর চিনি মাখিয়ে নিলাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে সাদাতেল কড়াইতে দিলাম। তেল গরম হলে কাটা বেগুন গুলো সুন্দর আর মুচমুচে করে ভেজে নিয়ে একটা পাত্রে পর পর সাজিয়ে রাখলাম।
এবার কড়াই পরিষ্কার করে গ্যাসে কড়াই চাপলাম। প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল দিলাম। তেল গরম হলে দিলাম পাঁচফোড়ন ,সর্ষে - পোস্ত বাটা একটু হলুদ ,লাল লঙ্কাগুঁড়ো ,নুন , চিনি আর একটু জল । আঁচ বাড়িয়ে
কমিয়ে ভালো করে মিশ্রণ নাড়তে লাগলাম। দিলাম কয়েকটি গোটা কাঁচালঙ্কা। জল কমে মিশ্রণ থেকে তেল বেরোতে শুরু করলেই ,আঁচ কমিয়ে মিশ্রনের স্বাদ দেখে নিলাম। গ্যাস বন্ধ করে দিলাম।
ভাজা সাজানো বেগুন গুলোর মাঝখানটা একটু চিরে নিয়ে হাতা করে সর্ষে - পোস্তর মিশ্রণ অল্প অল্প করে ঢেলে দিতে লাগলাম। সমস্ত ভাজা বেগুন সর্ষে - পোস্তোয় মাখানো হয়ে গেলে .....তৈরি হয়ে গেলো বেগুন - মুখরোচক।
দুপুরে মেনু দেখে তো সব্বাই অবাক।সবাইকে দিলাম গরম গরম ভাত ,আর ২ টুকরো করে বেগুন - মুখরোচক। খাওয়ার পর তো সবাই দারুন খুশি। কি বানিয়েছো কি ? ভীষণ ভালো লাগছে। বড়োই অপূর্ব! স্বাদে যে মন ভরে গেলো । মনে হচ্ছে আর একটু খাই ,আবার খাই ..............। ভালো লেগেছে ? ঠিক আছে আবার হবে ...................
মজা করে খেতে হবে ,আনন্দ করে খেতে হবে ,তবেই সবাই থাকবে খুব ভালো আর অনেক অনেক সুস্থ।
Comments