top of page
Writer's pictureKaveri Nandi

আমড়া - পোস্তোয় - চাটনি


ভাতের পাতে একটু মিষ্টি মিষ্টি চাটনি ....মনে হয় আমরা সব্বাই খুবই পছন্দ করি | জিভ তো মধুর মধুর স্বাদে ভরে যায় ....সেই সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজের আনন্দটাও অনেক বেড়ে যায় | খাওয়া - দাওয়া তার পরিপূর্ণতা পায় | আর তাইতো প্রতিটি রান্নাঘরের ...প্রায় প্রতিদিনের মেনুতেই কোনো না কোনো ধরণের চাটনির মুখরোচক মেনু দেখতেই পাই |গ্রীষ্মের কঠিন দাবদহে সর্ষে ফোরণে কচি কচি আমের পাতলা চাটনি .......আবার হাড়কাঁপানো শীতে পাকাকুলের মুখরোচক চাটনি ........ভাবলেই জিভে জল এসে যাচ্ছে .....তাছাড়া সারা বছর টমেটোর নানাধরণের চাটনি ,মাঝে মধ্যে পেঁপের রসালো চাটনি ,আরো নানা রকম মজাদার চাটনি ..........আমরা কিন্তু ভাতের পাতে জমিয়ে জমিয়ে উপভোগ করি |


ক - দিনের অসহ্য গরমে মন - প্রাণ ছটফট ছটফট করছিলো | আর যেনো পেরে উঠছিলাম না | মন বলেই চলছিলো......একটু স্বস্তি .....একটু স্বস্তি .....| হঠাৎ কাল দুপুরে জোরালো ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয়েছিলো মুষুলধারে বৃষ্টি | ব্যাস তারপরেই আবহাওয়া কেমন যেনো পাল্টে গেলো | জোরালো হাওয়া থেমে গেলেও ঝির - ঝির....ঝির - ঝির করে বৃষ্টি পরেই চলছিলো | আজ সকালে ঘুম ভেঙেও দেখি খুব হালকা হালকা বৃষ্টি পড়ছে | রাস্তা - ঘাট , রাস্তার পাশের ফুটপাত ,গাছপালা ,বাড়িঘরের ছাদ - দেওয়াল .....সবই কেমন যেনো ভেজা ভেজা | ভীষণ ভালো লাগছিলো | যেনো পেয়ে গেলাম অনেকটাই স্বস্তি .....


এরমধ্যেই সকালের বাজার সারা | আনন্দে মন ছটফট করছে ....আজ কি রাঁধবো ? .......কি রাঁধবো ....|একটু অন্য রকম কিছু হলে .... বেশ হবে | থলি থেকে বাজার নামাতে নামাতে .....চোখে পড়লো কয়েকটা খুব কচি কচি আমড়া .......অনেক অনেক দিন বাদে আজ আমার রান্নাঘরে আমড়া ! বাহঃ -দারুন ! ....এই ওয়েদারে রাঁধবো টেস্টি -টেস্টি করে আমরার টক | ওয়েদার তো খানিকটা জমিয়েই দিয়েছে .........আমি না হয় খাবার টেবিল ও একটু জমিয়ে দেব .......



ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ মনে হলো ....মা ...আমড়া আর পোস্ত দিয়ে কি -দারুন ,আর সুস্বাদু ...আমড়ার চাটনি রাঁধতো ....আর ভাবতে ভাবতে জিভে জল ও এসে গেলো .....| নাঃ ! নাঃ ! আজ আমিও পোস্ত দিয়েই আমড়ার মুখরোচক চাটনিই রাঁধবো | বর্ষা ভেজা দুপুরে ...খাওয়ার পাতে দারুন ! দারুন !


পোস্ত ভালো বাসেনা এমন বাঙালি ....কিন্তু খুবই কম | আর পোস্ত এমন এক স্পেশাল স্বাদে ভরা যে ......পোস্ত দিয়ে যা রান্না হবে তাই হয়ে উঠবে অসামান্য | আর আমড়া ? ......এর তো গুনের কথা বলে শেষ করাই যাবে না | আমড়া খেলে ,জ্বর - জ্বালা ...সর্দি - কাশি যেমন শরীর থেকে দূরে থাকে .........তেমনি দীর্ঘদিন সর্দি - কাশি ...জ্বর - জ্বালার ভুগে ...মুখ যখন বিস্বাদে ভরে যায় ...তখন সেই মুখই স্বাদে ভরে দিতে পারে কচি কচি সবুজ সবুজ আমড়া ....মানে আমড়ার যে কোনোও মেনু | তবে সবচাইতে ভালো মেনু আমড়ার মুখরোচক চাটনি | তাছাড়া আমড়ায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ,ভিটামিন ডি , ভিটামিন ই ,ক্যালসিয়াম ,ফাইবার ....যা প্রতিটি.. শরীরের উপকারে অপরিহার্য | রকল্পতা দূর করতেও আমড়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য | তাই মাঝে মাঝে রান্নাঘরে আমড়ার মেনু মানেই ...ছোট থেকে বড়ো সবারই ভালো |


উপকরণ :-


  • আমড়া - কচি কচি সবুজ সবুজ ...২০০ গ্রাম ( ৪ টুকরো করে কেটেকুটে পরিষ্কার করে জলে ধুয়ে নিয়ে ,জল ঝরানো )

  • পোস্ত - ৫০ গ্রাম ( জলে ভেজানো )

  • কালো গোটা সর্ষে - ১ চামচ

  • গোটা শুকনো লঙ্কা - ৩-৪ টি

  • হলুদগুঁড়ো - ১ চামচ

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - প্রয়োজনমতো

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো


পদ্ধতি :-


আজকের দুপুরের রান্না সারতে রান্নাঘরে ঢুকে পড়লাম | প্রথমেই রাঁধবো ....আমড়া পোস্তর মুখরোচক চাটনি | কারণ খাওয়ার সময়ের মধ্যে চাটনি ঠান্ডা হয়ে যাবে | আর চাটনি ঠান্ডা না হলে তো ভালোই লাগবে না | আজকের চাটনি হবে এক্কেবারে ঠিকঠাক......... টেবিল জমানো |



রান্না শুরুর প্রথমেই মিক্সিতে জলে ভেজানো পোস্ত জল ঝরিয়ে নিয়ে মিহি করে বেটে রাখলাম | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল ভালোমতো গরম হতেই আঁচ কমিয়ে দিলাম ৪ টি ফাটানো গোটা শুকনোলঙ্কা আর ১ চামচ মতো কালো সর্ষে | দিলাম জলে ধুয়ে রাখা ,কাটা আমড়ার টুকরোগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ ভালো করে কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে ,আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিলাম হলুদগুঁড়ো আর নুন |



আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে আমড়া কুচিগুলো ভালো করে ভাজতে লাগলাম | সুন্দর এক লোভনীয় গন্ধে রান্নাঘর ভরে উঠলো | আঃ ....কি দারুন ! এবার আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে দিলাম ,প্রয়োজনমতো জল | কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ টগবগ করে ফুটে উঠতেই দিলাম দিয়ে দিলাম আন্দাজ করে চিনি | বেশি আঁচে একটু নেড়েচেড়ে ,আঁচ কমিয়ে রান্না মজতে দিলাম |


রান্না মজে গিয়েছে মনে হতেই ,রান্না একটু চেখে দেখলাম| বাহঃ ,ঠিকঠাকই তো মনে হচ্ছে , এইবার আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে দিলাম

মিহি করে পোস্ত বাটা | আঁচ বাড়িয়ে রসা একটু ঘন ঘন করে নিয়ে ,রান্নাটা আরেকবার চেখে দেখলাম | ওহো হো .....কি দারুন ..কি দারুন হয়েছে | আনন্দে মনটা লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে | গ্যাস বন্ধ করে ,আমড়া - পোস্তর চাটনি একটা পাত্রে ঢেলে ঠান্ডা হতে দিলাম খাবার টেবিল তো আজ আমি জমাবই .......জমাবো .........


দুপুরে খাবার টেবিলে আমরা বাড়ির সব্বাই | বৃষ্টি ভেজা দিনে আজ কেউ বাড়ির বাইরে যাইনি | রেইনি - ডে উপভোগ করতে করতে জমিয়ে চললো আমাদের খাওয়া দাওয়া | আর এই খাওয়া দাওয়ার শেষ পাত টা কি ভীষণ জমে উঠলো .....তা বোধহয় আমাকে আর মুখে বলে বোঝাতে হবে না | কারণ আপনারা তো ভালোভাবেই এতক্ষনে সব বুঝেই ফেলেছেন | কি ? ...ঠিক বলছি তো ?


আপনারাও ....বর্ষা - বৃষ্টি তে জমিয়ে জমিয়ে মজার মজার খাওয়া দাওয়া করুন | আর ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন , থাকুন অনেক অনেক আনন্দে |





17 views0 comments

Comments


bottom of page