শিল্প - রন্ধন শিল্প ! এই পৃথিবীর বিশাল এক শিল্প। কত শত মানুষের রুজি -রোজগার ,আশা ,ভরসা ,স্বপ্ন ........হয়তো এই শিল্প। হয়তো -ই বা বলবো কেন ? বলবো নিশ্চয় -ই। প্রত্যেক মানুষই কিন্তু এক একজন শিল্পী। প্রকৃতির শিল্প - কলা ....ফল ,ফুল ,গাছ ,পাখি ,পাহাড় ,নদী,ঝর্ণা .........যাদের ভালো লাগে ; তারা প্রত্যেকেই তো শিল্পী। কারণ তাদের মধ্যে শিল্প - স্বত্বা না থাকলে ,এতবড়ো শিল্প -কলার সম্বন্ধে তাদের ভালোবাসাই জন্মাতো না।
আমার মধ্যে একজন শিল্পী আছে ...এই ভাবনাটা কেউ হয়তো ভাবে না ,কেউ ভাবার সুযোগ পায় না ,কেউ আবার ভাবতেই চায় না। আর যিনি বুঝে ফেলেন !তিনি তো একজন মহা শিল্পী.....।
আমাদের প্রত্যেকের সংসারেই একজন মহা শিল্পী আছেন। ঘর কিভাবে সুন্দর করে সাজবে ,সন্তান কি করে সুখে থাকবে ,পরিবার - পরিজন কি ভাবে আনন্দে থাকবে ,সংসারে কিভাবে শান্তি আর সুস্থতা বজায় থাকবে ,এই চিন্তায় যিনি সব সময়েই ব্যস্ত - তিনিই সেই শিল্পী - পরিবারের গৃহিনী।
গৃহিণীদের রান্নাঘরটিই কিন্তু ,তাদের শিল্পী - স্বত্বা বোঝানোর সব চাইতে বড়ো জায়গা। রান্নাবান্না ঠিক তো সংসারের অনেকটাই ঠিক। অনেকটাই শান্তি। ভালো রান্না খেতে আমরা সবাই ভালোবাসি। সারাদিনের পরিশ্রম আর ক্লান্তির পর টেবিলে একটু ভালো স্বাদের খাবার পেলে কার না ভালো লাগে ?আমিও একজন গৃহিনী। আর আমি এই জায়গাটা নিয়েই ভাবি।অন্তত রান্নায় যদি একটু বৈচিত্র আনতে পারি, তবে সবাই তো একটুও খুশি থাকবে।আর সু - আহার -- সু - স্বাস্থ্য ও তৈরি করে।
আজ আমার আমিষ রান্নার মেনু আড় মাছ। আড় মাছ খুব আকর্ষণীয় এক মাছ। মাছে কাঁটা কম। খেতে মাখনের মতো। বাচ্চারা তো ভীষণ পছন্দ করেই ,বড়দেরও আড় মাছ দেখে জিভে জল আসেই।আড় মাছ কিন্তু খুবই উপকারী এক মাছ। মানব শরীরে হাড়ের গঠন মজবুত করতে ,ছোটদের বেড়ে ওঠার কাজে ,আড় মাছের ভূমিকা অপরিসীম। তাই মাঝে মাঝে আড় মাছ খেলে আমাদেরই উপকার ,আমাদেরই ভালো।
৬-৭ টুকরো আড় মাছ। টুকরো গুলো বেশ বড়ো বড়ো সাইজের আর খুবই টাটকা। দেখেই ভেবে নিলাম আজ টেস্টি টেস্টি করে রাঁধবো খুব মুখরোচক ...আড় - মাছ - মাখা। গরম গরম ভাতে অসাধারণ।
উপকরণ :-
আড় মাছ - ৬০০ গ্রাম ( ৬-৭ পিস )
টমেটো - ১টি বড়ো সাইজের ( কুচানো )
পেঁয়াজ - ৪-৫টি (কুচানো )
৪-৫ কোয়া রসুন ( মিহি করে কুচানো )
আদা - ১/২ ইঞ্চি মতো ( মিহি করে কুচানো )
কাঁচালঙ্কা - ৭-৮টি ( কিছু গোটা ,কিছু অর্ধেক করে চেরা )
হলুদ - ১/২ থেকে ১ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - কয়েকদানা ( অবশ্যই স্বাদের জন্য )
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্বতি :-
আড় মাছের টুকরো গুলো ভালো করে ধুয়ে একটু নুন মাখিয়ে ৪-৫ মিনিট রেখে দিলাম। এরপর আরো একবার ভালো করে জল দিয়ে মাছ গুলো ধুয়ে নিয়ে নুন ,হলুদ মাখালাম। একটা কড়াই নিয়ে তাতে নুন হলুদ মাখানো মাছগুলো রাখলাম ,এবার দিলাম পেঁয়াজকুচি ,রসুন কুচি, আদা কুচি ,নুন ,অল্প চিনির দানা ,টমেটো কুচি ,অর্ধেক করা চেরা কাঁচালংকাগুলো আর প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল।
গ্যাস জ্বালালাম। কড়াইতে হাত দিয়ে অল্প অল্প জল ছিটিয়ে দিয়ে ,আঁচ বাড়িয়ে গ্যাসে কড়াই চাপলাম। উপকরণ সমেত কড়াই গরম হতেই আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে আড় - মাছ - মাখা হতে দিলাম। সুন্দর রান্নার গন্ধ রান্নাঘরে ছড়িয়ে পড়লো ।
কিছুক্ষন বাদে ঢাকা খুলে দেখি ,মাছ - মাখা থেকে জল বেরিয়ে মাছ সেদ্ব হয়েছে। রান্নার স্বাদ দেখে ,আঁচ বাড়িয়ে গোটা কাঁচালঙ্কা কড়াইতে দিয়ে আড়- মাছ - মাখা...... মাখো মাখো করে গ্যাস বন্ধ করে ফেললাম। নিজে আর কি বলবো ? খেতে অসাধারণ হয়েছে।
দুপুরে খাবার টেবিলে সবাই বলেই দিলো,গরম গরম ভাত আর ..আচারের মতো রান্না-- আড় - মাছ - মাখা .... দিয়েই খাবো। রান্নাটা স্বাদে গুনে বড়োই ভালো ,বড়োই অসাধারণ !!!আনন্দের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া শেষ হলো। খুব ভালো লাগলো।
ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন ,আনন্দে থাকুন।
Comments